বাংলাদেশের মহান
স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের মিছিলে যে সাত জনের আত্মত্যাগ ও বীরত্বে
জাতি তাঁদেরকে 'বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাবে ভূষিত করে মরণোত্তর সম্মান দিয়েছে,
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান তাঁদের অন্যতম।
পারিবারিক পরিচিতি:
১৯৪৭ সালে ভারতের
চব্বিশ পরগনা থেকে অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা থেকে ৩৫ কিলোমিটার
দূরে মহেশপুরের খর্দা খালিশপুর গ্রমে বসতি স্থাপন করেন আক্কাস আলি। নতুন
পরিবেশে নানামুখী অভাব অনটনের কঠিন এই জীবন সংগ্রামের মধ্যে ১৯৫৩ সালের ২রা
ফেব্রুয়ারী মা কায়েছুন্নেসার কোল আলোকিত করে আসেন হামিদুর রহমান। চার
ভাই-বোনের মধ্যে হামিদুর ছিলেন বড়। বর্তমানে হামিদুর রহমানের বাবা মা কেউই
বেঁচে নেই। এই বাড়ীতে এখন আছে তাঁর ছোট তিন ভাই।
কর্ম জীবন:
ছেলে বড় হয়ে দরিদ্র পিতার পাশে দাঁড়াবেন এটিই ছিলো পিতা-মাতার আশা। কিন্তু ইচ্ছা থাকা সত্বেও অভাব অনটনের কারণে স্কুলে ভর্তি হয়েও পড়া-শোনা বেশী দূর এগোয়নি হামিদুরের। খুব ছোটবেলা থেকে হামিদুরকে জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়। কখনও পিতার সাথে কাজে বের হতেন হামিদুর রহমান আবার কখনও পরের বাড়ীতে পেটে ভাতে থাকতে হয়েছে তাঁকে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ:
সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে ১৯৭১ সালে ২রা ফেব্রুয়ারী তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ভর্তি হন। শুরু হলো স্বাধীনতা যুদ্ধ। অন্যান্যদের মত হামিদুর রহমান তাঁর মাতৃভূমিকে রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। হামিদুর রহমানের ইউনিট ছিল সিলেট অঞ্চলে। স্থানটি হল শ্রীমঙ্গল থানার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত ধলই বি. ও. পি। এলাকাটা ভারত সীমান্তের খুবই নিকটবর্তী। এখানেই হামিদুর রহমান বীরত্বের শ্রেষ্ঠ নজীর রেখে শহীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের উপাধি পেয়ে বাংলার জনগণের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে রইলেন।
২৮শে অক্টোবর ১৯৭১। মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নিলেন ভোর রাতেই ধলই সীমান্ত
ঘাঁটি আক্রমণ করা হবে। সেভাবেই এগিয়ে চললেন তারা। শত্রু ঘাঁটি থেকে অনবরত
গুলি আসছে। শত্রম্নদের মেশিনগান স্তব্ধ করতে পারলেই ঘাঁটিটি দখল সহজ হবে।
ভোরের আমেজ তখনও কাটেনি। হঠাৎ
করে গর্জে উঠলো মিত্র ও শত্রু বাহিনীর আগ্নেয়াস্ত্র। মুক্তিযোদ্ধারা বীর
বীক্রমে আঘাত হেনে চলেছে শত্রু বাহিনীর উপর। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের
আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকলো, অবশ্য মুক্তিযোদ্ধারা তখন লক্ষ্য বস্তুর
কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। কিন্তু মূলে প্রবেশ করতে পারছেন না। এমন সময় অধিনায়ক
লেঃ কাইয়ুম হামিদুরকে হুকুম দিলেন পেছন দিক থেকে ঘুরে গিয়ে আঘাত হানতে।
অধিনায়কের নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রস্তুত অসীম সাহসী সৈনিক হামিদুর
রহমান এল.এম.জি-টা কাঁধে নিয়ে অতি কষ্টে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ক্রলিং করে
শত্রু চোখ ফাঁকি দিয়ে মেশিনগান পোস্টের কাছে চলে গেলেন। হামিদুর রহমানের
নিচে কঠিন মাটি। সামনে পিছনে ডানে বায়ে বৃষ্টির মত গুলি ছুটছে। কোন
ভ্রম্নক্ষেপ নেই সাহসী এই যোদ্ধার।
মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও গগন বিদায়ী
হুঙ্কার দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন শত্রু মেশিনগান পোস্টের উপর। মেশিনগান চালক দুই
শত্রু বাহিনীর সঙ্গে শুরু করলেন ধস্তা ধস্তি। এই সুযোগে অন্য
মুক্তিযোদ্ধারা পৌঁছে গেলেন কাঙ্খিত লক্ষ্যে। এক সময় মেশিনগান পোস্টটি নিরব
হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নিলেন ধলই। কিন্তু তখন হামিদুর রহমান আর
নেই। তিনি তখন তাঁর সৃষ্টিকর্তার কাছে পৌঁছে গেছেন। বিজয় মুক্তিযোদ্ধারা
ছুটে গোলেন মেশিনগান পোস্টের কাছে। খুঁজে পেলেন সহযোদ্ধা সিপহী হামিদুর
রহমানের লাশ।
হামিদুরের সমাধি:
বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আমবাসা গ্রামে চির নিদ্রায় শায়িত দেশের এই বীরশ্রেষ্ঠ। মৌলভিবাজার সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে স্মৃতিফলকটি দেখতে প্রতিদিন লোক সমাগম হলেও সীমান্ত দিয়ে ভারতে লোক পারাপারে ব্যবস্থা না থাকায় দেশের এই কৃতি সন্তানের কবর দেখা কারো পক্ষেই সম্ভব হতো না। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকার হামিদুর রহমানের দেহবশেষ দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনেন।
ছেলে বড় হয়ে দরিদ্র পিতার পাশে দাঁড়াবেন এটিই ছিলো পিতা-মাতার আশা। কিন্তু ইচ্ছা থাকা সত্বেও অভাব অনটনের কারণে স্কুলে ভর্তি হয়েও পড়া-শোনা বেশী দূর এগোয়নি হামিদুরের। খুব ছোটবেলা থেকে হামিদুরকে জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়। কখনও পিতার সাথে কাজে বের হতেন হামিদুর রহমান আবার কখনও পরের বাড়ীতে পেটে ভাতে থাকতে হয়েছে তাঁকে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ:
সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে ১৯৭১ সালে ২রা ফেব্রুয়ারী তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ভর্তি হন। শুরু হলো স্বাধীনতা যুদ্ধ। অন্যান্যদের মত হামিদুর রহমান তাঁর মাতৃভূমিকে রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। হামিদুর রহমানের ইউনিট ছিল সিলেট অঞ্চলে। স্থানটি হল শ্রীমঙ্গল থানার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত ধলই বি. ও. পি। এলাকাটা ভারত সীমান্তের খুবই নিকটবর্তী। এখানেই হামিদুর রহমান বীরত্বের শ্রেষ্ঠ নজীর রেখে শহীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের উপাধি পেয়ে বাংলার জনগণের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে রইলেন।


হামিদুরের সমাধি:
বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আমবাসা গ্রামে চির নিদ্রায় শায়িত দেশের এই বীরশ্রেষ্ঠ। মৌলভিবাজার সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে স্মৃতিফলকটি দেখতে প্রতিদিন লোক সমাগম হলেও সীমান্ত দিয়ে ভারতে লোক পারাপারে ব্যবস্থা না থাকায় দেশের এই কৃতি সন্তানের কবর দেখা কারো পক্ষেই সম্ভব হতো না। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকার হামিদুর রহমানের দেহবশেষ দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
নাম: মোহাম্মদ হামিদুর রহমান
জন্ম: ২ ফেব্রুয়ারি , ১৯৫৩
জন্মস্থান: ২৪ পরগনা , পশ্চিমবঙ্গ
পিতা: আক্কাস আলী
মাতা: কায়দাছুন্নেসা
কর্মস্থল: সেনাবাহিনী
যোগদান: ১৯৭০ সাল
কর্মস্থল পদবী: সিপাহী
মুক্তিযুদ্ধে অংশরত সেক্টর: ৪নং সেক্টর
মৃত্যু: ২৮ অক্টোবর , ১৯৭১ সাল
সমাধিস্থল: মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান
জন্ম: ২ ফেব্রুয়ারি , ১৯৫৩
জন্মস্থান: ২৪ পরগনা , পশ্চিমবঙ্গ
পিতা: আক্কাস আলী
মাতা: কায়দাছুন্নেসা
কর্মস্থল: সেনাবাহিনী
যোগদান: ১৯৭০ সাল
কর্মস্থল পদবী: সিপাহী
মুক্তিযুদ্ধে অংশরত সেক্টর: ৪নং সেক্টর
মৃত্যু: ২৮ অক্টোবর , ১৯৭১ সাল
সমাধিস্থল: মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান